নয়া দিল্লি: শীর্ণ চেহারা, মাথা জোড়া টাক, সাদা দাড়ি-গোঁফে আবৃত মুখমণ্ডল, পরণে গেরুয়া পোশাক। তামিলনাড়ুর তাঞ্জোরের ৬৩ বছর বয়সি যোগী রাম্ভুস্বামীকে আপাতদৃষ্টিতে আর পাঁচটা হিন্দু সন্ন্যাসীর মতোই মনে হবে। কিন্তু তার সম্পর্কে তাঞ্জোরে একটু খোঁজখবর করলেই বোঝা যায়, তিনি মোটেই ‘সাধারণ’ নন। কেননা কথিত আছে, অগ্নিযোগী নামে বিখ্যাত এই মানুষটির শরীর আগুনে পুড়ে না।
রাম্ভুস্বামীর সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, আধ্যাত্মিকতার প্রতি তার টান ছিল শৈশব থেকেই। যৌবনে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে যখন তার বয়স ২২ বছর তখন থেকে পানি খাওয়া একরকম ছেড়েই দেন রাম্ভুস্বামী। দিনে কয়েকফোঁটার বেশি পানি খেতেন না তিনি। বছর দু’য়েক পরে শুরু হয় তার খাবারদাবার সংক্রান্ত কৃচ্ছ্রসাধন। সারাদিনে দু’টি কলা আর এক গ্লাস দুধ খেয়ে জীবনধারণ করা শুরু করেন তিনি।
এখনও সারাদিনে দু’টো কলা, এক গ্লাস দুধ আর কয়েক ফোঁটা পানি খেয়েই ক্ষুৎপিপাসা নিবৃত্ত করেন বলে দাবি করেন যোগী রাম্ভুস্বামী। ওজন মাপার যন্ত্রে তাকে দাঁড় করালে দেখা যায়, বর্তমানে এই শীর্ণ মানুষটির ওজন মাত্র ৪৩ কেজি।
রাম্ভুস্বামীর খ্যাতি অবশ্য অন্য কারণে। প্রতি বছর বিশ্বশান্তির লক্ষ্যে তিনি এক আশ্চর্য যজ্ঞের আয়োজন করেন। অগ্নিযজ্ঞ নামে পরিচিত এই যজ্ঞে রাম্ভুস্বামী প্রথমে অগ্নিকুণ্ড প্রস্তুত করেন ও তাতে অগ্নি নিক্ষেপ করেন। আগুনের শিখা যখন লেলিহান হয়ে ওঠে তখন সেই আগুনে প্রবেশ করেন তিনি নিজে। আগুন সর্বদিক থেকে ঘিরে ফেলে যোগীকে। আর যোগী আগুনের মধ্যে শুয়ে বরাভয় মুদ্রায় উত্তোলিত করে রাখেন একটি হাত। যজ্ঞ শেষ হলে হাসতে হাসতে অগ্নিবলয় থেকে বেরিয়ে আসেন যোগী, একেবারে অক্ষত দেহে।
রাম্ভুস্বামীর দাবি বিগত ৪৫ বছরে অন্তত ১০০০ বার এই যজ্ঞের আয়োজন করেছেন তিনি। কোনোদিন আগুনের একটি আঁচও লাগেনি তার গায়ে। বিষয়টা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা কঠিন, কেননা এখনো একেবারে প্রকাশ্য দিবালোকে দর্শকদের চোখের সামনে অগ্নিযজ্ঞ চলাকালীন আগুনে প্রবেশ করেন যোগী। তবে কি তার ওই গেরুয়া বস্ত্রেই মাখানো থাকে কোনো বিশেষ রাসায়ণিক যা তাকে সুরক্ষিত রাখে আগুন থেকে? প্রশ্নটি ভাবিয়েছিল বিভিন্ন যুক্তিবাদী সংগঠনকে। তারা অগ্নিযজ্ঞের সময়ে রাম্ভুস্বামীর ব্যবহৃত পোশাকের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করান। কিন্তু পরীক্ষায় সন্দেহজনক কিছুই মেলেনি। তবে কি সবটাই অলৌকিক ক্ষমতা? কী বলছেন যোগী নিজে? “আসলে হিংসা-দ্বেষ-লোভ তো মানুষকে আগুনের মতোই দগ্ধ করে। সেই দহনের জ্বালা আমি নিজের শরীরে ধারণ করে অগ্নিদেবের কাছে বিশ্বশান্তির জন্য প্রার্থনা করি। অগ্নিদেব জানেন আমার এই সৎ উদ্দেশ্যের কথা। তাই তিনি কখনো কোনো ক্ষতি করেন না আমার।” স্মিত মুখে বলছেন অগ্নিযোগী রাম্ভুস্বামী।
তিনি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হোন বা না হোন— দুনিয়াজোড়া এই অশান্তির কালবেলায় তার মতো বিশ্বশান্তির জন্য ভাবিত মানুষের প্রয়োজন যে সত্যিই রয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
পাঠকের মতামত: